প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িক্ত ও কর্তব্য পর্ব ১

প্রিয় পাঠক পাঠিকা, প্রতিবন্ধী ইনফো ডট সাইটের পক্ষ থেকে একরাশ প্রিতি ও ভালবাসা গ্রহণ করবেন। আজ প্রতিবন্ধীদের জন্য অতি গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। আমাদের বর্তমান আলোচ্য বিষয় হল, প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িক্ত ও কর্তব্য। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অনুযায়ি বাংলাদেশে ৪৬ লাখ প্রতিবন্ধী আছে। এই বিরাট জনগোষ্ঠীকে যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত না করতে পারলে এরা পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য বোঝায় পরিণত হবে। তাই প্রতিবন্ধীদের প্রতি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িক্ত রয়েছে।
প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িক্ত ও কর্তব্য
প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের দায়িক্ত ও কর্তব্য কি কি সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। আপনার পরিবারে যদি একজন বা একাধিক প্রতিবন্ধী সদস্য থাকে। তবে প্রতিবন্ধী সদস্যকে বোঝা মনে না করে প্রতিবন্ধী শিশুটির প্রতি য¦তœবান হউন। সঠিক পরিচর্যা ও সুযোগ সুবিধা পেলে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিও আর দশজন সাধারণ মানুষের মত যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
সুজন রহমান
নিচে একজন সফল দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সফলতার গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করব। যাতে করে আপনারা বুঝতে পারেন, সঠিক পরিচর্যা এবং একটু সহায়তা পেলে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নিজেকে এক অন্যূন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
কুষ্টিয়া জেলায় ১৯৮৪ সালে মো: সুজন রহমানের জন্ম হয়। জন্মগত ভাবেই সুজন রহমান দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধী ছিলেন। তিনি দু চোখে প্রায় কিছুই দেখতে পেতেন না। তাই সাধারণ বিদ্যালয়ে সুজন রহমান লেখাপড়া করার সুযোগ পায়নি। কুষ্টিয়া জেলার স্বমন্বিত অন্ধ শিক্ষা কার্যক্রম (রিসোর্স সেন্টার) এ সুজন রহমান প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভর্তি হন।
সুজন রহমানের মা সুজন রহমানের লেখাপড়ার ব্যাপারে ছিলেন অত্যান্ত য¦তœশীল। ছেলের লেখাপড়া সুজন রহমানের মায়ের কাছে ছিল সব থেকে বেশি গুরুত্বপুর্ণ। কুষ্টিয়ার রিসোর্স সেন্টার থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর, সুজন রহমান কুষ্টিয়া হাই স্কুলে ভর্তি হয়। সুজন রহমান যেহেতু দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধী ছিল, দুই চোখে সে যেহেতু প্রায় কিছুই দেখতে পেত না তাই সুজন রহমান ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করতেন।
ছোট বেলা থেকেই সুজন রহমানের সংগীতের প্রতি ছিল বিশেষ আগ্রহ। সুজন রহমান যখন প্রথম শ্রেনীতে পড়ত, তখন রিসোর্স সেন্টারের সংগীত শিক্ষকের কাছে তা সংগীতে হাতে খড়ি হয়।
পরবর্তিতে সুজন রহমান কুষ্টিয়া শিল্পকলা এ্যকাডেমিতে ভর্তি হয় এবং সংগীতের উপর ডিপ্লমা ডিগ্রি অর্জন করে। লেখাপড়ার পাশাপাশি সুজন রহমান মন দিয়ে সংগীত চর্চা করতে থাকে। সুজন রহমান বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীত প্রতিযোগীতামুলক অনুষ্ঠান ক্লোজআপ ওয়ানে অশংগ্রহণ করে। সংগীত ক্ষেত্রে সুজন রহমানের আছে অসামান্য জনপ্রিয়তা, কুষ্টিয়ায় সংগীতের সাথে যুক্ত আছে কিন্তু সুজন রহমানকে চেনে না এমন মানুষ হয়ত খুজে পাওয়া কঠিন।
এছাড়াও সুজন রহমান উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছে, কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সুজন রহমান মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছে। সুজন রহমান যেহেতু সংগীত জগতের মানুষ তাই সে কেবলমাত্র গান শিখেই ক্ষান্ত দেয়নি। সুজন রহমান কিবোর্ড বাজানো শিখেছে। সুজন রহমান বেশ কয়েকটি গান রচনা করেছে। সুজন রহমান বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলার জেলা কাঞ্চালার অফিসার হিসেবে কর্মরত আছে।
প্রিয় পাঠক একটু চিন্তা করে দেখুন তো, একজন দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধী, যে কিনা জন্ম থেকেই চোখে দেখতে পায় না। সে বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলার জেলা কাঞ্চালার অফিসার হিসেবে কর্মরত আছে। তার আছে অকল্পনিয় সামাজিক মর্যাদা। আর দশজন অপ্রতিবন্ধী সাধারণ মানুষ সুজন রহমানকে স্যার বলে সম্মধন করে। কত সভা সেমিনারে সুজন রহমান বক্তব্য দেয়া। প্রতি মাসে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকের মাসিক মিটিংয়ে সুজন রহমান অংশগ্রহণ করে।
যেখানে আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধীদের অশুভ ও বোঝা হিসেবে গোন্য করা হয়। সেখানে একজন সুজন রহমান আমাদের জন্য উজ্জল দৃষ্ট্রান্ত। একটু বেভে দেখুন তো। সুজন রহমানের মা যদি মনে করতেন, সুজন রহমান দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধী তাকে লেখাপড়া করিয়ে কি হবে। তাহলে সুজন রহমান কি আজ সফলতার চুড়ায় উন্নিত হতে পারত?। উত্তর হল না পারত না।
আমাদের পরিবারে কোন প্রতিবন্ধী সদস্য থাকলে আমরা মনে করি। ও প্রতিবন্ধী ওকে লেখাপড়া করিয়ে কি লাভ, ও তো জিবনে কিছু করতে পারবে না। না করতে পারবে চাকরি বাকরি, না করতে পারবে ব্যবস্য বানিজ্য। তাই প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া করার কোন দরকার নেই। প্রিয় পাঠক আমাদের এই ধারণা যে কতটা অসত্য তা সুজন রহমানের গল্প থেকেই আশা করি বুঝতে পেরেছেন। সুধু সুজন রহমানই নয় আরেকজন সফল দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জীবন গল্পও আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
এই গল্প থেকে আপনারা জানতে পারবেন একজন অতি দরিদ্র পরিবারের দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধী সন্তান কিভাবে লেখাপড়া করে সরকারি চাকরি পায়। প্রিয় পাঠক এক পোস্টে সম্পুর্ণ আলোচনা করতে গেলে পোস্টের দৈর্ঘ অনেক লম্বা হবে। তাই কয়েকটি পর্বে আলোচনা সম্পন্য করা হবে।
প্রিয় পাঠক আজকের মত এ পর্যন্তই দ্বিতীয় পর্ব পড়ার অগ্রিম আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ্য থাকবেন, লেখাটি পড়ার জন্য সকল পাঠক পাঠিকাকে জানাই অনেক অনেক ধন্যবাদ।