কিভাবে বিনামুল্যে হুইল চেয়ার পাওয়া যায়

প্রিয় পাঠক আমাদের ওয়েবসাইটের আরেকটি নতুন কন্টেন্টে আপনাকে জানাই স্বস্বাগতম। আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় হল কিভাবে বিনামুল্যে হুইল চেয়ার পাওয়া যায়। প্রিয় পাঠক আমরা যারা শারীরিক প্রতিবন্ধী আছি আমাদের জন্য হুইল চেয়ার বিশেষ প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা একদম হাটাচলা করতে পারেন না তাদের জন্য হুইল চেয়ারই একমাত্র ভরসা। আমাদের দেশ যেতেহু একটি গরীব রাষ্ট্র তাই তাই আমাদের দেশে বেকারত্বের হার অনেক বেশি। আমাদের বাংলাদেশে সাধারণ সুস্থ্য সবল মানুষের জন্যই চাকরি পাওয়া বা আত্বকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাটা অনেক কঠিন।
সেখানে শারীরিক প্রতিবন্ধীরা তো কোন চাকরিও পায় না এমনকি কোন ব্যবসা বানিজ্যও করতে পারে না। তাই তারা পরিবার ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝাতে পরিনত হয়। বাংলাদেশ সরকার অবশ্য প্রতিবন্ধীদের আর্থীক সহায়তা প্রদানকল্পে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান করে বটে, তবে ভাতার টাকার পরিমাণও খুবই সামান্য ২০২৪ সালে প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ মাসিক ৮৫০ টাকা মাত্র। এই সামান্য টাকায় বাচেনা শ্বপ্ন বাচে না জীবন।
এমন আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীর পক্ষে দশ পনের হাজার টাকা দিয়ে হুইল চেয়ার ক্রয় করা সম্ভব নয়। তাই বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠান অসহায় গরীব প্রতিবন্ধীদের বিনামুল্যে কিংবা নামমাত্র মুল্যে হুইল চেয়ার প্রদান করে। আজ অবশ্য আমরা শুধুমাত্র সরকারি হুইল চেয়ার প্রদান সংক্রান্ত আলোচনা করব, বেসরকারি সংস্থার হুইল চেয়ার প্রদান কার্যক্রম সম্পর্কে অন্য কোন পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
কিভাবে বিনামুল্যে হুইল চেয়ার পাওয়া যায়
বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধীদের প্রতি সব সময়ই য¦ন্তশীল। বাংলাদেশ সরকার সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের বিভিন্য সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে। এই ফাউন্ডেশনও প্রতিবন্ধীদের সেবায় বিভিন্য কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যেমন বিনামুল্যে থেরাপি সেবা, সহায়ক উপকরণ প্রদান, প্রশিক্ষন প্রদান ইত্যাদি। জাতীয় এছাড়াও প্রান্তিক পর্যায়ের প্রতিবন্ধীদের সেবায় জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সারা বাংলাদেশের জেলা পর্যায়ে প্রতিবন্ধী সেবা ও সহায়তা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিবন্ধী সেবা ও সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রান্তিক পর্যায়ের প্রতিবন্ধীদের বিনামুল্যে থ্যারাপি সেবা, সহায়ক উপকরণ প্রদান সহ আরও অনেক ধরণের সেবা ও সহযোগীতা প্রদান করে।
আমা এই পোস্টে শুধুমাত্র হুইল চেয়ার প্রাপ্তি সংক্রান্ত আলোচনা করব তাই প্রতিবন্ধী সেবা ও সহায়তা কেন্দ্রের অন্যন্য সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে এই পোস্টে আলোচনা করব না। আসুন এবার আলোচনা করি কিভাবে বিনামুল্যে হুইল চেয়ার পাওয়া যায়। আগেই বলেছি বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ য¦ন্তশীল তাই বাংলাদেশ সরকার জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বিনামুল্যে হুইল চেয়ার প্রদান করে। এবার আমরা আলোচনা করব কিভাবে হুইল চেয়ারের জন্য আবেদন করতে হবে, কোথায় আবেদন করতে হবে, কিভাবে আবেদনপত্র লিখতে হবে কোথায় আবেদনপত্র জমা দিতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে।
হুইল চেয়ারের জন্য কিভাবে আবেদনপত্র লিখতে হয়
বিনামুল্যে হুইল চেয়ার পাবার জন্য প্রতিবন্ধী সেবা ও সহায়তা কেন্দ্রের অফিসার (প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা) বরাবর একটি আবেদন পত্র লিখতে হবে। নিচে আবেদনপত্রের একটি নমুনা দেয়া হল, আপনি চাইলে এই নমুনা দেখে আপনার নিজের জন্য আবেদনপত্র লিখতে পারেন কিংবা যদি আপনি নিজে আবেদনপত্র লিখতে পারেন তবে এই নমুনা অনুসরণ না করলেও চলবে নমুনা নিচে দেয়া হল।
বরাবর,
প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা
বগুড়া (বগুড়ার স্থানে আপনার নিজের জেলার নাম লিখবেন)
বিষয়: হুইল চেয়ার চেয়ে আবেদন প্রসঙ্গে।
জনাব যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি (এখানে আপনার নিজের নাম লিখবেন, যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য আবেদন করা হচ্ছে তার নাম লিখতে হবে) পিতা: (এখানে আবেদনকারীর পিতার নাম লিখবেন) মাতা: (এখানে আবেদনকারীর মাতার নাম লিখতে হবে) ঠিকানা: (এখানে আবেদনকারীর ঠিকানা লিখতে হবে) আমি একজন গরীব অসহায় বেকার শারীরিক প্রতিবন্ধী। আমি হুইল চেয়ার ছাড়া চলাফেরা করতে পারি না। আমার পক্ষে হুইল চেয়ার ক্রয় করে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তাই আপনার কাছে আমার আর্জি আমাকে একটি হুইল চেয়ার প্রদান করার ব্যবস্থা করুন।
এতঃএব জনাবের নিকট আমার আকুল আবেদন এই যে, আমাকে একটি হুইল চেয়ার প্রদানের ব্যবস্থা করতে জনাবের সদয় মর্জি হয়।
বিণিত
(এখানে আবেদনকারী স্বাক্ষর করবেন)
(এখানে ব্রাকেটের ভেতর আপনার আবেদনকারীর নাম লিখবেন)
তারপর আবেদনকারীর বোমাইল নাম্বারটি লিখবেন, মনে রাখবেন একটি সচল মোবাইল নাম্বার দিতে হবে, কারণ আবেদন গৃহিত হলে এই মোবাইল নাম্বারের মাধ্যমে আপনার সাথে অফিস থেকে যোগাযোগ করা হবে।
আবেদনপত্র লেখা হয়ে গেলে তা একটি খামে ভরবেন, খামের ডান পাশে লিখবেন প্রাপক, প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা, বগুড়া, (বগুড়ার স্থানে আপনি যে জেলার বাসিন্দা সেই জেলার নাম লিখবেন। এবং খামের বাম পাশে প্রথমে আপনার নাম লিখবেন, তারপর আপনার ঠিকানা লিখবেন, তারপর আপনার মোবাইল নাম্বারটি লিখবেন। এরপর খামটি হাতে নিয়ে চলে যাবেন আপনার জেলার প্রতিবন্ধী সেবা ও সহায়তা কেন্দ্রে অফিসে। সেখানে গিয়ে প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তার সাতে দেখা করে তাকে আপনার প্রয়োজনের কথা জানাবেন। তিনি আপনার আবেদনটি গ্রহণ করবেন এবং আপনাকে একটি হুইল চেয়ার প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
হুইল চেয়ারের জন্য আবেদন করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়
হুইল চেয়ারের জন্য আবেদন করতে আপনার কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হবে যেমন: আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, আপনার প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং আপনার একটি সম্পুর্ণ রঙ্গিন ছবি। সম্পুর্ণ ছবি বলে বোঝানো হয়েছে ছবিটি এমনভাবে তুলতে হবে যাতে করে আপনি যে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী তা যে ছবিতে দৃশ্যমান হয়। এসকল কাগজপত্র আবেদনপত্রের সাথে পিন দিয়ে সংযুক্ত করে তা জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর আবেদনটি গৃহিত হলে আপনার সাথে অফিস থেকে যোগাযোগ করা হবে। আপনাকে কবে কোথায় আসতে হবে তা জানিয়ে দেয়া হবে।