প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান পর্ব ৩ অল্প পুজির ব্যবসা

প্রিয় পাঠক প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান সিরিজের নতুন আরেকটি পোস্টে আপনাকে জানাই স্বাগতম। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিবন্ধীদের আত্বকর্মসংস্থান সৃষ্ট্রির গাইডলাইন প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান শির্ষক একটি সিরিজ চালু করেছি। এই সিরিজের মাধ্যমে আমরা প্রতিবন্ধীদের অত্ব নির্ভরশীল হবার কিছু টিপস দেয়ার চেষ্টা করছি। এই সিরিজের বিগত ২ টি পোস্টে হাস মুরগি পাল ও বøগিং করে টাকা আয় সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি সেই পোস্ট দুটি না পড়ে থাকেন তবে এই দুটি পোস্ট পড়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। আজ আমরা খুব অল্প পুজির একটি ব্যবসার মাধ্যমে আত্বকর্মসংস্থান সৃষ্ট্রি সংক্রান্ত আলোচনা করার চেষ্টা করব। আপনারা যে সকল প্রতিবন্ধীরা অল্প পুজির ব্যবসা করতে চান কিংবা ছোট ব্যবসা করতে চান তাদের জন্য মুলত আজকের এই পোস্টটি।
অল্প পুজির ব্যবসা
আমরা যারা প্রতিবন্ধী আছি আমাদের জন্য লেখাপড়া করে চাকরি পাওয়াটা অনেক কঠিন, এমন অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছে যারা পরিবারের অসহযোগিতার কারণে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেনি। তারা এখন হতাশায় ভুগছেন, কি করবেন, চাকরি করবেন নাকি ব্যবসা করবেন বুঝতে পারছেন না। যেহেতু লেখাপড়া করতে পারেন নি তাই তারা চাকরিও পায় না আবার নিজের টাকা না থাকার কারণে ব্যবসাও করতে পারছে না। আপনাদের সাথে আজ খুব অল্প পুজির একটি ব্যবসার আইডিয়া শেয়ার করব, শুধুমাত্র ব্যবসার আইডিয়াই নয় কিভাবে ব্যবসার জন্য পুজি যোগাড় করবেন সে সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে। আমরা তো সবাই কম বেশি ঝাল মুরি বা এ জাতীয় খাবার থেকে ভালবাসি। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে আপনি প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
আপনি যদি গ্রাম পর্যায়ে বসবাস করেন তবে আপনার ইউনিয়ন পরিষদের আশেপাশে বা ইউনিয়নের সব চেয়ে বড় বাজারে আপনি যদি ঝালমুড়ি বিক্রি করেন তবে প্রতি মাসে ভাল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এই পোস্টটি লেখার আগে আমি একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতার সাথে আলোচনা করেছিলাম। আমি তার থেকে জানার চেষ্টা করেছিলাম, তিনি কত দিন যাবৎ ব্যবসা করছেন, তার ব্যবসা করতে কত টাকার পুজি প্রয়োজন হয়েছে, প্রতিদিন তিনি কত টাকা লাভ করেন ইত্যাদি। তার সাথে আলোচনা করে যা বুঝলাম তা আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। তিনি আমাকে জানান, তিনি প্রতিবন্ধী হবার কারণে কোথাও কোন কাজের ব্যবস্থা করতে পারেননি। দির্ঘদিন যাবত হতাশায় ভুগে শেষ মেষ ছোট খান একটি ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অনেক চিন্তা ভাবনা করার পর তিনি ঝালমুড়ি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি তার ইউনিয়নের বাজারে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন এতে করে প্রতিদিন ৩ থেকে চার শত টাকা তিনি উপার্জন করেন।
আমি তাকে জিগ্গাসা করলাম ব্যবসা শুরু করতে তার কত টাকা প্রয়োজন হয়েছিল। তিনি আমাকে জানান ব্যবসা শুরু করতে প্রথমে তার প্রয়োজন হয়েছিল ৫ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে সে ঝাল মুড়ি তৈরীর মসলা ক্রয় করে এবং একটি বড় টুল ও কয়েকটি কৌটা মগ, চাকু ক্রয় করে। এই সামান্য পুজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করার পর তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি বর্তমানে যে পরিমাণ টাকা উপার্জন করেন তাতে তার পরিবার খুব ভাল ভাবেই চলে যায়। তিনি তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করেছেন, তার ঝালমুড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। প্রিয় পাঠক মনে রাখবেন কোন কাজ ই ছোট নয়। ঘরে বেকার বসে থেকে অন্যদের অকথা কুকথা শোনার চেয়ে সৎ পথে ব্যবসা করে টাকা উপার্জন করাটা অনেক সম্মানের। তাই আপনারা যারা ছোট ব্যবসা করার কথা ভাবছেন তারা এই ব্যবসাটি করতে পারেন, বলা তো যায় না এই ব্যবসাতেই আপনি সফল হতে পারে।
প্রিয় পাঠক এই ছিল আমাদের আজকের আলোচনা। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ্য থাকবেন এবং বেকার বসে না থেকে নিজের পায়ে দাড়ানোর চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন দারিদ্রতার চেয়ে বড় অভিশাপ আর কিছু হয় না। অনেক মানুষ মনে করে প্রতিবন্ধীরা কোন কাজ কর্ম করে খেতে পারে না, আমরা যারা প্রতিবন্ধী আছি আমাদের উচিত তাদের দেখিয়ে দেয়া আমরাও কাজ কর্ম চাকরি বাকরি করতে পারি। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ্য থাকবেন, লেখাটি পড়ার জন্য সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।