ভাতা অনুদান ও ঋণ

প্রতিবন্ধী ভাতা কবে দেবে ২০২৫

প্রিয় পাঠক প্রতিবন্ধী ইনফো ডট নেট এর নতুন একটি পোস্টে আপনাকে স্বাগতম। আজ আমরা আপনাদের বহুল জিগ্গাসিত একটি টপিকে আলোচনা করব আর তা হল প্রতিবন্ধী ভাতা কবে দেবে ২০২৫। প্রিয় পাঠক অসহায় গরীব প্রতিবন্ধীদের আর্থীক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সাল থেকে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচীর মাধ্যমে গরীব প্রতিবন্ধীদের ভাতা দিয়ে আসছে। ২০০৬ সালে প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ ছিল মাসিক ২৫০ টাকা।

যা সময়ের সাথে বারতে বারতে এখন ২০২৫ সালে প্রতিবন্ধী ভাতার মাসিক পরিমাণ ৮৫০ টাকা। বর্তমান বাজারে মাসে ৮৫০ টাকায় কিছুই হয়না। বিভিন্য সমিক্ষায় জানা যায় বাংলাদেশে একজন ব্যক্তির একমাস চলতে কমপক্ষে ৩,৫০০ টাকা লাগে, সেখানে একজন প্রতিবন্ধীকে বাংলাদেশ সরকার মাসে ভাতা দেয় ৮৫০ টাকা।

আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে চিনি যারা আর্থীকভাবে শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ভাতার উপর নির্বরশীল। এসকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অন্য কোন উপার্জনের ব্যবস্থা নেই। সরকার থেকে দেয়া মাসিক ৮৫০ টাকায় বাচেনা শ্বপ্ন, বাচেনা জীবন। বিভিন্য প্রতিবন্ধী সংস্থা প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য দির্ঘদিন যাবত দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকারের সেদিকে কোন কর্নপাত নেই। আমরা সকল অসহায় প্রতিবন্ধীদের সাথে শুর মিলিয়ে বলতে চাই প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হোক।

প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ এমন ভাবে বৃদ্ধি করা হোক যাতে করে একজন উপার্জনহীন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি একমাস চলতে পারে। বিভিন্য প্রতিবন্ধী সংস্থা এবং কিছু প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ মাসিক ১৫ হাজার টাকায় উন্নিত করার দাবি জানিয়ে আসছে। কেউবা আবার বলছেন প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ মাসিক ৫ হাজার টাকা করা হোক।

আমি বলতে চাই ১৫ হাজার বা ৫ হাজার নয় প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ এমনভাবে বৃদ্ধি করা হোক যাতে করে সেই টাকা দিয়ে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি একমাস মোটামোটিভাবে চলতে পারে। অনেক অসুস্থ্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দিয়েই চিকিৎসা গ্রহণ করেন ঔষুধ ক্রয় করেন। আপনিই বলেন তো বর্তমান বাজারে ৮৫০ টাকা দিয়ে কয়বার দাক্তার দেখানো যায় কয়টা ঔষুধ কেনা যায়।

সরকার প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য যে সামান্য পরিমাণ টাকা দেয় তা পেতেও প্রতিবন্ধীদের নানা বিরম্বনার শিকার হতে হয়। বিকাশ ও নগদে ভাতার টাকা দেয়া শুরু হবার পর যেমন প্রতিবন্ধীদের কিছু সুবিধা হয়েছে তেমন অনেক অসুবিধাও সামনে চলে এসেছে। আগে প্রতিবন্ধীদের স্বশরীরে ব্যংকে গিয়ে ভাতার টাকা গ্রহণ করতে হত। কিন্তু ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার ভাতার টাকা প্রাপ্তি সহজ করতে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা মোবাইল ব্যংকিং সার্ভিস বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

ফলে আসলেই প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা পাওয়া আগের যে কোন সময়ের তুলনায় সহজ হয়েছে। যখন প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা ব্যংকের মাধ্যমে দেয়া হত তখন প্রতিবন্ধীদের ব্যংকে গিয়ে ভাতার টাকা আনতে হত এতে করে মৃদু বা মাঝারি প্রতিবন্ধীদের ব্যংকে গিয়ে ভাতার টাকা আনতে তেমন সমস্যা না হলেও চরম প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকার জন্য ব্যংকে যাওয়াটা ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য।

চরম প্রতিবন্ধীদের কষ্ট সম্পর্কে ধারনা দেবার জন্য একটি উদাহারণ দেয়া যেতে পারে। কুষ্টিয়া জেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন এর বাসিন্দা মো: জাহিদুল ইসলাম তার বয়স ৪৫। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী, তার প্রতিবন্ধীতার মাত্রা চরম। তিনি হুইলচেয়ারের মাধ্যমে চলাফেরা করেন, হুইলচেয়ার ছাড়া তিনি চলাচল করতে পারেন না। হাটশ হরিপুর একটি নদী বেষ্টিত অঞ্চল, জাহিদ সাহেবকে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা আনতে কুষ্টিয়া শহরে অবস্থিত সোনালি ব্যংকে যেতে হত।

তার পক্ষে নদী পার হয়ে কুষ্টিয়াতে গিয়ে ভাতা টাকা আনাটা ছিল অত্যান্ত কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। যেহেতু তিনি হুইল চেয়ার পার্সন তাই তার পক্ষে আর দশজন সাধারণ ব্যক্তির মত পায়ে হেটে বা জানবাহন পরিবর্তন করে কুষ্টিয়া শহরে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি কুষ্টিয়াতে যাবার জন্য একটি ভ্যানগাড়ি রিজার্ভ করতে হত। সেই ভ্যানে করে তিনি তার বাড়ী থেকে কুষ্টিয়াতে যেতেন এতে করে তার যেমন শারীরিক কষ্ট হত তেমনই ভ্যান রিজার্ভ করার জন্য ৩০০ টাকা ব্যয় করতে হত।

একটু চিন্তা করে দেখুন তো তিন মাস পর প্রতিবন্ধী ভাতা দিত মাত্র ২৫৫০ টাকা সেখান থেকে যদি তিনশত টাকা ভ্যান চলকক্ইে দিতে হয় তাহলে তার থাকে কয় টাকা। কিন্তু বর্তমানে মোবাইল ব্যংকিং সার্ভিসের মাধ্যমে ভাতার টাকা আসার ফলে জাহিদ সাহেবকে আর ভ্যান রিজার্ভ করে কুষ্টিয়াতে যেতে হয় না তাই তার শারীরিক কষ্টও যেমন হয়না তেমন ভ্যান ভাড়াও দিতে হয়না তাই তার টাকাও বেচে যায়।

প্রতিবন্ধী ভাতা কবে দেবে ২০২৫

প্রিয় পাঠক এবার প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা কবে দেবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। বাংলাদেশ সরকার ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরেও প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করেনি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের মত প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ ৮৫০ টাকাতেই আছে।

২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই তিন মাসের প্রতিবন্ধী ভাতা কবে দেবে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আমরা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা অধিশাখার একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। তিনি আমাদের জানিয়েছেন ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের দ্বিতীয় কিস্তির প্রতিবন্ধী ভাতা অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই তিন মাসের প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের ৬ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যেই দেয়া হবে। ভাতার টাকা মোবাইল ব্যংকিং সার্ভিস বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে প্রদান করা হবে।

প্রতিবন্ধী ভাতা কত টাকা ২০২৫

২০০৬ সালে প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচী চালু হবার পর প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ ছিল মাসিক ২৫০ টাকা। যা সময়ের সাথে বাড়তে বাড়তে এখন ২০২৫ সালে মাসিক ৮৫০ টাকায় উত্তির্ণ হয়েছে। এই টাকা মোবাইল ব্যংকিং সার্ভিস বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে জি টু পি পদ্ধতিতে প্রদান করা হয়। জি টু পি অর্থ্যৎ গভমেন্ট টু পার্সন।

প্রতিবন্ধী ভাতা কত দিন পর পর দেয়

প্রিয় পাঠক অনেকেই আমাদের কাছে প্রশ্ন করেন প্রতিবন্ধী ভাতা কত দিন পর পর দেয়। আপনাদের প্রশ্নের উত্তরে বলছি প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা প্রতি বছরে মোট চারটি কিস্তিতে পরিশোধ করা হয়।

প্রতি তিন মাস পর পর একবার প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দেয়া হয় যেমন জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসের প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা একসাথে দেয়া হয়। এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসের প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা একসাথে দেয়া হয়। এভাবে বছরে চারটি কিস্তির মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা প্রদান করা হয়।

প্রতিবন্ধী ভাতা কবে থেকে শুরু হয়

প্রিয় পাঠক অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আর্থীক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সাল থেকে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচী চালু করে তাই বলা যায় ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা চালু হয়।

প্রিয় পাঠক আজকের মত আলোচনা এ পর্যন্তই, এই আলোচনা থেকে আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা কবে দেয়া হবে। আপনি আর কি বিষয়ে জানতে চান তাও আমাদের কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

মনে রাখবেন আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে অত্যান্ত মুল্যবান। আপনাদের কমেন্ট থেকে আমরা আমাদের পরবর্তি পদক্ষেপ প্রগণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব তাই অবশ্যই আপনি কমেন্ট করবেন। প্রিয় পাঠক সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ্য থাকবেন লেখাটি পড়ার জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button